চীনা নাবিক চেই মো’র গল্প
২০২১ সালের ৩০ জুন চাই মো ও আরও দু’জন নাবিক শাংহাই থেকে রওনা হন। তার ঠিক এক মাস পর তারা বেরিং প্রণালী অতিক্রম করে সুমেরুবৃত্তে প্রবেশ করেন। সুমেরুবৃত্তকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা এ রুটকে মৃত্যুর রুট বলে ডাকা হয়। অনেক নাবিক এখানে প্রাণ হারিয়েছেন। এ রুটের সংশ্লিষ্ট সমুদ্রও রহস্যময় মৃত্যুকূপ হিসেবে পরিচিত।
যখন বরফে পাল তোলে তিনজন পালাক্রমে ডিউটি দেন, তখন অন্তত একজনকে জেগে থাকতে হয়। পঞ্চাশ কিলোমিটার ভাসমান বরফ রুটে যেতে তাদের ১১ ঘণ্টার মতো সময় লাগত।
প্রতিবার যাত্রার জন্য দীর্ঘসময়ের প্রস্তুতি সেরে নেন চেই মো। বিপজ্জনক হলেও সমুদ্র যাত্রার প্রতি তার ভালবাসা কখনও পরিবর্তন হয়নি। ইচ্ছে করে একটা নৌকা কিনেন তিনি এবং তার যাত্রা ওই মুহূর্ত থেকে শুরু হয়।
১৯৬৮ সালে শান তুং প্রদেশের থাই আন শহরের একটি খনি শ্রমিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন চেই মো। তার বাবা তাকে মো নাম দিয়েছেন, চীনা ভাষায় তার অর্থ কালি। পরে তিনি শানতুং একাডেমি অব আর্টস অ্যান্ড ক্রাফটসে ভর্তি হন এবং একজন চিত্রকর হন। ২০০০ সালে তিনি নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ডে একটি চিত্র প্রদর্শনী আয়োজন করেন এবং সেখানে ডেভিড নামে একজন নরওয়েজিয়ান নাবিকের সঙ্গে পরিচিত হন। সত্তর বছর বয়সী ডেভিড ওই সময়ে পালতোলে দেড় বার পৃথিবী ঘুরেছেন। ডেভিড তাকে জানিয়েছেন, একটি নৌকা দিয়ে বিশ্বের ৭০ শতাংশ জায়গায় যাওয়া যায় এবং কোন ভিসা লাগবে না।
পরিবর্তী দিন চেই মো নৌকা কিনতে গেলেন। তার চিত্র বিক্রি করে টাকা নিয়ে ৩ লাখ ইউয়ান মূল্যের পুরাতন পালতোলা একটি নৌকা কিনেন তিনি। বিশ বছরের প্রাচীন এ নৌকাকে নাম দিয়েছেন পাই ইউন, তার অর্থ সাদা মেঘ। যেখানে নৌকা তিনি কিনলেন, সেখান থেকে অকল্যান্ডের মধ্যে রয়েছে ৫ ঘণ্টার সমুদ্র যাত্রা। তাই এ যাত্রার মাধ্যমে এ নৌকার আগের মালিক চেই মোকে মৌলিক পালতোলা কৌশল শিখিয়েছেন। যখন তারা অকল্যান্ডে পৌঁছেছেন, তখন চেই মো প্রায় পালতোলা নৌকা চালানো শিখে গেছেন।